অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ এবং ১৬ জুলাইকে ‘জুলাই শহীদ দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, ৮ আগস্ট আর কোনো বিশেষ দিবস হিসেবে পালিত হবে না। রোববার (২৯ জুন) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।
এর আগে গত ২৫ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক পরিপত্রে জানানো হয়েছিল যে, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিনটিকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। একই পরিপত্রে ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ায় দিনটিকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে পালনের কথা বলা হয়েছিল। এছাড়া, গণ-আন্দোলন চলাকালে রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের স্মরণে ১৬ জুলাইকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
৮ আগস্ট নিয়ে বিতর্ক ও নতুন সিদ্ধান্ত
৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর শীর্ষ তিন নেতা সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ এবং আখতার হোসেন এই বিষয়ে প্রকাশ্য আপত্তি জানান। ইনকিলাব মঞ্চ নামের একটি সংগঠন ৮ আগস্ট কোনো দিবস মানবে না বলে জানিয়েছিল এবং সে দিনকে ‘বিপ্লব-বেহাত দিবস’ হিসেবে পালন করার ঘোষণা দেয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই যুক্তি দেন যে, ৫ আগস্ট যখন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সফল হয়েছিল, তখন সেটিই জাতীয় মুক্তির দিন। ৮ আগস্ট কেবল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দিন, যা আলাদাভাবে দিবস করার যৌক্তিকতা নেই।
এই প্রেক্ষাপটে, রোববার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয় যে, ৮ আগস্টকে আর কোনো বিশেষ দিবস হিসেবে পালন করা হবে না। পরিবর্তে, ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে এবং ১৬ জুলাই ‘জুলাই শহীদ দিবস’ হিসেবে পালিত হবে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার পূর্বে জারি করা পরিপত্র সংশোধন করেছে।
১৬ জুলাই: গত বছরের জুলাই মাসে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সূত্র ধরে ১৬ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া সেই আন্দোলন পরবর্তীতে বৃহত্তর গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। এখন থেকে এই দিনটি ‘জুলাই শহীদ দিবস’ হিসেবে পালিত হবে।
৫ আগস্ট: ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এই দিনটি এখন ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।